রামরাজাতলা (Ramrajatala - Howrah)
রামরাজাতলা, নামটা চেনা চেনা লাগছে কি? South Eastern লাইনে সাঁতরাগাছি স্টেশন নিশ্চয়ই সবাই চেনেন। তার আগের স্টেশনটাই হলো রামরাজাতলা। স্থানীয়রা বলেন রামতলা। জানেন কি জায়গাটার নাম কেনো হয়েছে রামরাজাতলা বা রামতলা। আজ বলবো এই রামরাজাতলার কথা।
তা প্রায় ৩০০ বছর আগের কথা। সেই সময় এই জায়গার জমিদার ছিলেন অযোধ্যারাম চৌধুরী। তিনি স্বপ্নাদেশ পান রামচন্দ্রের পুজো করার। সেইমত তিনি উদ্যোগী হন বিশালাকার রামসীতার মূর্তি তৈরি করে পুজো সুরু করতে। কিন্তু বাধ সাধে এলাকার কিছু স্থানীয় মানুষ। কারন রামপুজোর আগে এখানে খুব ধুমধাম করে সরস্বতী পুজো করা হতো। তারা দাবী করেন সরস্বতী পুজোই বড় করে করা হবে। জমিদার মশাই তাদের সাথে আলোচনা করে ঠিক করেন, রামপুজো হবে কিন্তু রাম সীতার মাথায় থাকবেন জ্ঞানের দেবী মা সরস্বতী। আর সরস্বতী পুজোর দিনই রামঠাকুরের মূর্তি তৈরি শুরু করা হবে এবং সেদিনই শুরু হবে রাম ঠাকুরের প্রারম্ভিক পুজো। এই সমাধান উভয়পক্ষ মেনে নেয় ও তখন থেকে শুরু হয় রামপুজোর। সেইমত এখনো সরস্বতী পুজোর দিন নিকটস্থ ষষ্ঠীতলার নির্দিষ্ট বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ কেটে সূচনা হয় রামপুজোর। আর রামের মূর্তির উপরে থাকে পাঁচটি সরস্বতী দেবীর মূর্তি। এছাড়াও শিব, ব্রম্ভা সহ প্রায় আরো ২৬টি দেবেদেবির মূর্তি থাকে এই বিশালাকার রাম ঠাকুরের মূর্তিতে। মূর্তিটি প্রায় দুতলা বাড়ির সমান উঁচু হয়। আর এই রাম ঠাকুরের নাম থেকেই এই জায়গাটির নামও হয় রামরাজাতলা।
রামরাজা পুজো এই অঞ্চল তথা হাওড়ার এক বিশেষ উৎসব। রামঠাকুরের জন্য রয়েছে স্থায়ী মন্দির। প্রথমে রামপুজো হতো তিনদিন, পরে তা বেড়ে পনেরদিন ও আরো বেড়ে এক মাস হয়। এখন রামনবমীর দিন পুজো শুরু হয় এবং প্রায় চার মাস পরে শ্রাবণ মাসের শেষ রবিবার এক বিশাল শোভাযাত্রা করে রাম ঠাকুরের বিসর্জন করা হয়। এই চারমাস ধরে রামতলায় রামমন্দিরের সামনে বসে মেলা। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন রাম ঠাকুর দেখতে। রাম ঠাকুরের সাথে সাথে এখানে পূজিত হন দশাবাতার, সাবিত্রী সত্যবান ও মহাবীর। এদের জন্যও রয়েছে আলাদা আলাদা মন্দির।
![]() | ![]() |
সাবিত্রী সত্যবান - রামরাজাতলা | মহাবীর - রামরাজাতলা |
রাম ঠাকুরের সাথে এই অঞ্চলে আরো তিনটি প্রায় সমান মাপের বড় ঠাকুর পুজো হয়। রামতলার কাছে ইছাপুরে হয় শমীচন্ডী পুজো, আর বাকসারায় হয় নতুন ও পুরোনো নবনারীর পুজো। এই বড় ঠাকুরগুলির সাথেও পূজিত হন সাবিত্রী সত্যবান। এছাড়াও পূজিত হন রাধা কৃষ্ণ মূর্তি ও নারায়নের মূর্তি। রাম ঠাকুর ছাড়াও এই তিন ঠাকুরেরও বিসর্জন হয় এদিনই।রাম ঠাকুরের সাথে সাথে এই তিন ঠাকুরেরও বিসর্জন হয় এদিনই।
![]() | |
শমীচন্ডী | |
![]() | ![]() |
নতুন নবনারী | পুরানো নবনারী |
![]() | ![]() |
দশাবতার | নারায়ণ |
গত রবিবার ছিল শ্রাবণ মাসের শেষ রবিবার। আগের বছরগুলির মতই রবিবার সকাল থেকে শুরু হয়ে যায় সাজো সাজো রব। এই দিন দুপুর থেকে রাম ঠাকুরের গঙ্গায় যাওয়ার সব রাস্তার সবরকম যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুপুর থেকে ভিড় জমতে শুরু করে রাম বিজয়া দেখার জন্য। সন্ধ্যে হতে হতে রাস্তার দুপাস কানায় কানায় ভরে যায়। বিভিন্ন অস্থায়ী দোকান গড়ে ওঠে শুধু একদিনের জন্য। সারা রাস্তাটা যেন হয়ে ওঠে এক মেলা। সারা রাস্তায় কিছু কিছু দূর ছাড়া ছাড়াই থাকে পানীয় জলের ব্যবস্থা। যাতে যারা দূর থেকে ওই বিশাল বিশাল ঠকুরগুলিকে টেনে আনছে তারা গলা ভিজিয়ে নিতে পারে।
![]() | |
বাদক | |
![]() | ![]() |
ভিড় | জীবিকা |
তবে এখন পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছুর। আগে রাত্রিবেলা হ্যাজাক জালিয়ে নিয়ে যাওয়া হত রামঠাকুরকে। এখন যুগের সাথে পরিবর্তিত হয়েছে সাজ সজ্জার। হ্যাজাকের জায়গা নিয়েছে হ্যালোজেন ও LED আলো। গরুর গাড়ির জায়গায় এসেছে TATA ৪০৭, বেড়েছে বিজ্ঞাপনের চমক। আরো অনেক কিছু। কিন্তু তার সাথে কোথাও যেন মিশে আছে সেই পুরনো সাবেকিয়ানা ও ঐতিহ্য।
সঙ্গে রইলো রামরাজা বিজয়ার কিছু ছবি….
==================
কিছু তথ্য়
==================
- রামরাজা পুজো শুরু হয় রাম নবমীর দিন ও শেষ হয় শ্রাবণ মাসের শেষ রবিবার
- হাওড়া থেকে ৫২ নং বাসে বা রামরাজাতলা - রাজাবাজার মিনিবাসে রামরাজাতলা আসা যায় বা ট্রেনে করে রামরাজাতলা স্টেশনে নেমে টোটো বা রিক্সাতে পৌছানো যায় রামরাজা মন্দিরে
==================
সায়ন্তন বসু
==================
দারুন 👍
ReplyDeleteএকবার যেতে হবে।