বর্ষায় বরন্তি (পর্ব-১)
বর্ষায় বরন্তি (পর্ব-১)
আমাদের হুজুগে গ্রূপ হাঁউ মাঁউ খাঁউ এর কথা তো আগেই বলেছি। শান্তিনিকেতন বেড়িয়ে আসার কিছুদিন পর থেকেই প্রাণটা আবার উড়ু উড়ু করতে শুরু করেছে সবার। এদিকে প্রচন্ড গরম। সামনে আবার মেয়েদের পরীক্ষা। কিন্তু বাই যখন উঠেছে কোথাও তো একটা যেতেই হবে। কোথায় যাওয়া যায় তাই নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। অবশেষে সন্দীপদা বললো বরন্তি চলো। সবাই একবাক্যে রাজি। মেয়েদের পরীক্ষা শেষ হতে হতে সেই আগস্ট মাস। তার মানে ভরা বর্ষা। যদিও বরন্তি যাবার আদর্শ সময় বসন্ত কাল, কিন্তু বর্ষাতেও বৃষ্টিস্নাত বরন্তির রূপ অসাধারণ।
যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। মেয়েদের পরীক্ষা শেষ হচ্ছে ৭ই আগস্ট। ১০ ও ১১ শনি রবি, আর ১২ তারিখ ঈদ। অর্থাৎ তিনদিন টানা ছুটি। ঠিক করলাম ১০ই আগস্ট আমরা বেরিয়ে পরবো বরন্তির উদ্দেশ্যে। শুধু বরন্তি নয় তার সাথে ঘুরে নেবো জয়চন্ডী পাহাড়, গড়পঞ্চকোট, পাঞ্চেৎ, মাইথন আর কল্যাণেশ্বরী মন্দিরও। সন্দীপদা বরন্তির Lake Hill Resort -এ ১০ ও ১১ তারিখের জন্য ঘর book করে ফেললো। আর আমি ১০ তারিখ Black Diamond এক্সপ্রেসে আসানসোল অবধি সিট রিজার্ভ করে নিলাম। সাথে সাথে ১২ তারিখ ওই ট্রেনেই কমারডুবি থেকে ফেরার টিকিটও কেটে নিলাম। যেহেতু আমরা মাইথন হয়ে ফিরবো তাই ফেরারটা কুমারডুবি দিয়ে কাটলাম। শুধু শুধু আসানসোল আসার কোনো মানে হয় না। এতে সময় আর খরচ দুটোই বাঁচে।
এরপর এক অতি উষ্ণ গ্রীষ্মকাল আর স্বল্প বৃষ্টির বর্ষাকাল পেরিয়ে একসময় এসে গেলো সেই কাঙ্খিত দিনটি। যদিও এবারে বর্ষাকালে খুব কম বৃষ্টি হয়েছে কিন্তু আমাদের যাবার ঠিক দুদিন আগে প্রকৃতি দেবী একটু সদয় হলেন। দুদিনের টানা বৃষ্টিতে গরমের তেজ বেশ খানিকটা কমিয়ে দিলেন। তাই ১০ তারিখ ভোর সাড়ে পাঁচটার সময় যখন হাওড়ার আট নম্বর প্ল্যাটফর্মে সবাই মিট করলাম মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে গেলো। যথাসময় ট্রেন ছাড়লো। ট্রেনের মধ্যেই বাড়ি থেকে করে আনা পরোটা আর আলুরদম দিয়ে প্রাতঃরাশ করে নেওয়া হলো।
ট্রেন যখন আসানসোল স্টেশনে গুটিগুটি পায়ে ঢুকলো ঘড়িতে তখন প্রায় দশটা। ট্রেন থেকে নেবেই আমি আর সন্দীপদা ছুটলাম টিকিট কাউন্টারের দিকে মুরাডি যাওয়ার লোকালের টিকিট কাটতে। আসানসোল থেকে একঘন্টা অন্তর অন্তর আসানসোল - আদ্রা Memu পাওয়া যায়। এই লোকালে করে আধঘন্টা লাগে মুরাডি স্টেশন। এখানে বলে রাখা ভালো আসানসোল থেকে সরাসরি গাড়িতে করেও বরন্তি আসা যায়।
১১টা নাগাদ বর্ধমান - আদ্রা লোকাল এসে দাঁড়ালো দু নম্বর প্ল্যাটফর্মে। আমরা ছিলাম তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে। ট্রেন আসার ঘোষণাটা যখন করলো ট্রেন তখন প্ল্যাটফর্মে ঢুকছে। অতএব ছানাপোনা বাক্স প্যাঁটরা নিয়ে ওভারব্রীজ দিয়ে দিতে হলো ছুট। একদিক দিয়ে ভালোই হলো পরের দিনের জয়চন্ডী পাহাড়ে ওঠার একটা ওয়ার্ম আপ হয়ে গেল। তবে দেখলাম এখানে ট্রেন বেশ অনেকক্ষণই দাঁড়ায়। কারণ আমরা অতটা ওঠা নাবা করে, ট্রেনে উঠে গুছিয়ে বসারও বেশ কিছক্ষণ পর ট্রেন ছাড়লো। সবাই গুছিয়ে বসার পর দেখি ধ্রুব এক ইডলিওয়ালা বাচ্ছাকে পাকড়েছে। মশলাদার একটা টকটক ডাল দিয়ে বেশ বানাচ্ছে ইডলিটা। দৌড়ঝাঁপ করে সকালের পরোটাটা হজম হয়ে গেছে অনেক্ষণ আগেই, একটু ইডলি হলে মন্দ হয় না। নিয়ে নেওয়া হলো বেশ কয়েক প্লেট ইডলি। ইডলি খাওয়া শেষ হতে না হতেই ট্রেন ছেড়ে দিলো মুরাডির উদ্দেশ্যে।
এই লোকাল গুলো কিন্তু আমরা যেরকম লোকাল দেখে অভ্যস্ত একেবারেই সেরকম নয়। যথেষ্ট পরিষ্কার পরিছন্ন এমনকি দেখলাম রয়েছে toilet ও। বেশ ফাঁকাও। আমাদের কয়েকজন বাদে মোটামুটি সবাই বসার জায়গাও পেয়ে গেছিলো। আমি কিছুক্ষণ বসে উঠে এসে দরজায় দাঁড়ালাম। এই লোকালগুলোতে এখনকার মতো একটা বড় দরজা থাকে না, পাশাপাশি দুটো ছোট দরজা থাকে। আর দরজা দিয়ে উঠে দাঁড়াবার জায়গাটাও এখানকার লোকালের থেকে বেশ বড়। স্থানীয় লোকজন ওখানে বসে নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব শুরু করে দিলো। আমি দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে থাকলাম।
শহুরে ইঁটকাঠের জঙ্গল ছেড়ে ট্রেন আস্তে আস্তে প্রকৃতির কোলের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলতে থাকলো। মধুকুণ্ডা স্টেশন পার হতেই দেখা দিলো বরন্তি পাহাড়। আমরাও তৈরি হলাম নাবার জন্য। কারণ পরের স্টেশনই তো মুরাডি। মুরাডি স্টেশনটা খুবই ছোট একটা স্টেশন। তবে বরন্তির কল্যাণে দেখলাম আমাদের সাথে আরও বেশ কিছু যাত্রী নবলো এখানে। বাইরে বেরিয়ে দেখলাম অটো দাঁড়িয়ে আছে। এই অটোগুলো বেশ বড় আকারের, অনায়াসে আমরা ছ'জন আর আমাদের তিন ছানা ধরে গেল তার মধ্যে। ভাঙাচোরা গ্রাম্য মেঠো রাস্তা দিয়ে অটো এগিয়ে চললো বড়ন্তির পথে।
যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। মেয়েদের পরীক্ষা শেষ হচ্ছে ৭ই আগস্ট। ১০ ও ১১ শনি রবি, আর ১২ তারিখ ঈদ। অর্থাৎ তিনদিন টানা ছুটি। ঠিক করলাম ১০ই আগস্ট আমরা বেরিয়ে পরবো বরন্তির উদ্দেশ্যে। শুধু বরন্তি নয় তার সাথে ঘুরে নেবো জয়চন্ডী পাহাড়, গড়পঞ্চকোট, পাঞ্চেৎ, মাইথন আর কল্যাণেশ্বরী মন্দিরও। সন্দীপদা বরন্তির Lake Hill Resort -এ ১০ ও ১১ তারিখের জন্য ঘর book করে ফেললো। আর আমি ১০ তারিখ Black Diamond এক্সপ্রেসে আসানসোল অবধি সিট রিজার্ভ করে নিলাম। সাথে সাথে ১২ তারিখ ওই ট্রেনেই কমারডুবি থেকে ফেরার টিকিটও কেটে নিলাম। যেহেতু আমরা মাইথন হয়ে ফিরবো তাই ফেরারটা কুমারডুবি দিয়ে কাটলাম। শুধু শুধু আসানসোল আসার কোনো মানে হয় না। এতে সময় আর খরচ দুটোই বাঁচে।
এরপর এক অতি উষ্ণ গ্রীষ্মকাল আর স্বল্প বৃষ্টির বর্ষাকাল পেরিয়ে একসময় এসে গেলো সেই কাঙ্খিত দিনটি। যদিও এবারে বর্ষাকালে খুব কম বৃষ্টি হয়েছে কিন্তু আমাদের যাবার ঠিক দুদিন আগে প্রকৃতি দেবী একটু সদয় হলেন। দুদিনের টানা বৃষ্টিতে গরমের তেজ বেশ খানিকটা কমিয়ে দিলেন। তাই ১০ তারিখ ভোর সাড়ে পাঁচটার সময় যখন হাওড়ার আট নম্বর প্ল্যাটফর্মে সবাই মিট করলাম মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে গেলো। যথাসময় ট্রেন ছাড়লো। ট্রেনের মধ্যেই বাড়ি থেকে করে আনা পরোটা আর আলুরদম দিয়ে প্রাতঃরাশ করে নেওয়া হলো।
ট্রেন যখন আসানসোল স্টেশনে গুটিগুটি পায়ে ঢুকলো ঘড়িতে তখন প্রায় দশটা। ট্রেন থেকে নেবেই আমি আর সন্দীপদা ছুটলাম টিকিট কাউন্টারের দিকে মুরাডি যাওয়ার লোকালের টিকিট কাটতে। আসানসোল থেকে একঘন্টা অন্তর অন্তর আসানসোল - আদ্রা Memu পাওয়া যায়। এই লোকালে করে আধঘন্টা লাগে মুরাডি স্টেশন। এখানে বলে রাখা ভালো আসানসোল থেকে সরাসরি গাড়িতে করেও বরন্তি আসা যায়।
১১টা নাগাদ বর্ধমান - আদ্রা লোকাল এসে দাঁড়ালো দু নম্বর প্ল্যাটফর্মে। আমরা ছিলাম তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে। ট্রেন আসার ঘোষণাটা যখন করলো ট্রেন তখন প্ল্যাটফর্মে ঢুকছে। অতএব ছানাপোনা বাক্স প্যাঁটরা নিয়ে ওভারব্রীজ দিয়ে দিতে হলো ছুট। একদিক দিয়ে ভালোই হলো পরের দিনের জয়চন্ডী পাহাড়ে ওঠার একটা ওয়ার্ম আপ হয়ে গেল। তবে দেখলাম এখানে ট্রেন বেশ অনেকক্ষণই দাঁড়ায়। কারণ আমরা অতটা ওঠা নাবা করে, ট্রেনে উঠে গুছিয়ে বসারও বেশ কিছক্ষণ পর ট্রেন ছাড়লো। সবাই গুছিয়ে বসার পর দেখি ধ্রুব এক ইডলিওয়ালা বাচ্ছাকে পাকড়েছে। মশলাদার একটা টকটক ডাল দিয়ে বেশ বানাচ্ছে ইডলিটা। দৌড়ঝাঁপ করে সকালের পরোটাটা হজম হয়ে গেছে অনেক্ষণ আগেই, একটু ইডলি হলে মন্দ হয় না। নিয়ে নেওয়া হলো বেশ কয়েক প্লেট ইডলি। ইডলি খাওয়া শেষ হতে না হতেই ট্রেন ছেড়ে দিলো মুরাডির উদ্দেশ্যে।
এই লোকাল গুলো কিন্তু আমরা যেরকম লোকাল দেখে অভ্যস্ত একেবারেই সেরকম নয়। যথেষ্ট পরিষ্কার পরিছন্ন এমনকি দেখলাম রয়েছে toilet ও। বেশ ফাঁকাও। আমাদের কয়েকজন বাদে মোটামুটি সবাই বসার জায়গাও পেয়ে গেছিলো। আমি কিছুক্ষণ বসে উঠে এসে দরজায় দাঁড়ালাম। এই লোকালগুলোতে এখনকার মতো একটা বড় দরজা থাকে না, পাশাপাশি দুটো ছোট দরজা থাকে। আর দরজা দিয়ে উঠে দাঁড়াবার জায়গাটাও এখানকার লোকালের থেকে বেশ বড়। স্থানীয় লোকজন ওখানে বসে নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব শুরু করে দিলো। আমি দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে থাকলাম।
শহুরে ইঁটকাঠের জঙ্গল ছেড়ে ট্রেন আস্তে আস্তে প্রকৃতির কোলের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলতে থাকলো। মধুকুণ্ডা স্টেশন পার হতেই দেখা দিলো বরন্তি পাহাড়। আমরাও তৈরি হলাম নাবার জন্য। কারণ পরের স্টেশনই তো মুরাডি। মুরাডি স্টেশনটা খুবই ছোট একটা স্টেশন। তবে বরন্তির কল্যাণে দেখলাম আমাদের সাথে আরও বেশ কিছু যাত্রী নবলো এখানে। বাইরে বেরিয়ে দেখলাম অটো দাঁড়িয়ে আছে। এই অটোগুলো বেশ বড় আকারের, অনায়াসে আমরা ছ'জন আর আমাদের তিন ছানা ধরে গেল তার মধ্যে। ভাঙাচোরা গ্রাম্য মেঠো রাস্তা দিয়ে অটো এগিয়ে চললো বড়ন্তির পথে।
কখনো দিগন্ত বিস্তৃত চাষের ক্ষেত, কখনো ছোটো আদিবাসী গ্রাম পেরিয়ে অটো একসময় পিরামিড আকৃতি বড়ন্তি পাহাড়ের পাশ দিয়ে এগিয়ে চলতে থাকলো। কী রূপ সেই রাস্তার। একদিকে বর্ষায় সজীব সবুজ বরন্তি পাহাড় আর আরেকদিকে দিগন্ত বিস্তৃত বরন্তি জলাধার মাঝখানে সরু কালো পীচ বাঁধানো রাস্তা। বরন্তি পাহাড় শেষ হতেই পড়লো সরু ছোট্ট বরন্তি নদী। তার lock গেটের উপর দিয়ে আমরা এগিয়ে চললাম আমাদের রিসর্টের দিকে। আমাদের অটো যখন Lake View Resort এর গেট ঠেলে তার প্রাকৃতিক লনে এসে থামলো ঘড়ি তখন বলছে বেলা ১২টা।
বরন্তি লেকের একদম গা লাগোয়া আমাদের এই রিসোর্টটি। পাশাপাশি দুটো আলাদা আলাদা দোতলা বাড়ি নিয়ে তৈরি হয়েছে রিসোর্টটা। বাড়িগুলির সামনেই রয়েছে সুন্দর বাগান। বাগানের পরে রয়েছে একটা বড় মাঠ যেটাকে আমি এইমাত্র বললাম প্রাকৃতিক লন। মাঠের একপাশে রয়েছে গাড়ি পার্কিং -এর জায়গা। আরেক পাশে রয়েছে দোলনা, বাচ্ছাদের খেলার জায়গা আর রয়েছে খুব সুন্দর সিমেন্ট দিয়ে বানানো একটা বৃত্তাকার বসার জায়গা। যেখানে রাত অবধি গোল হয়ে বসে আড্ডা দেওয়া যায়। মাঠের পরই শুরু হয়েছে বরন্তি লেক। বরন্তি লেকের ডানদিকে উঠে গেছে বরন্তি পাহাড় তার পিছনে দূরে আবছা ভাবে দেখা যায় পঞ্চকোট পাহাড়, লেকের বাঁদিকে একটু দূরে রামচন্দ্রপুর বড় পাহাড়। রিসোর্টের পিছনের বাউন্ডারি ওয়ালের পরই শুরু হয়েছে জঙ্গল আর তার একটু দূরেই উঠে গেছে নাম না জানা আর একটা পাহাড়।
বরন্তি লেকের একদম গা লাগোয়া আমাদের এই রিসোর্টটি। পাশাপাশি দুটো আলাদা আলাদা দোতলা বাড়ি নিয়ে তৈরি হয়েছে রিসোর্টটা। বাড়িগুলির সামনেই রয়েছে সুন্দর বাগান। বাগানের পরে রয়েছে একটা বড় মাঠ যেটাকে আমি এইমাত্র বললাম প্রাকৃতিক লন। মাঠের একপাশে রয়েছে গাড়ি পার্কিং -এর জায়গা। আরেক পাশে রয়েছে দোলনা, বাচ্ছাদের খেলার জায়গা আর রয়েছে খুব সুন্দর সিমেন্ট দিয়ে বানানো একটা বৃত্তাকার বসার জায়গা। যেখানে রাত অবধি গোল হয়ে বসে আড্ডা দেওয়া যায়। মাঠের পরই শুরু হয়েছে বরন্তি লেক। বরন্তি লেকের ডানদিকে উঠে গেছে বরন্তি পাহাড় তার পিছনে দূরে আবছা ভাবে দেখা যায় পঞ্চকোট পাহাড়, লেকের বাঁদিকে একটু দূরে রামচন্দ্রপুর বড় পাহাড়। রিসোর্টের পিছনের বাউন্ডারি ওয়ালের পরই শুরু হয়েছে জঙ্গল আর তার একটু দূরেই উঠে গেছে নাম না জানা আর একটা পাহাড়।
আমরা দোতলার তিনটি ঘর book করেছিলাম। একটা বাড়িতে দুটো ঘর আর তার পাশের বাড়িতে আর একটা ঘর। ঘরগুলি বেশ বড় ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। তবে AC নেই। তাই গরমে একটু কষ্ট হয়। তবে হাওয়া থাকলে কোনো অসুবিধা নেই। প্রতিটা ঘরে মধ্যে বসেই উপভোগ করা যায় বরন্তি পাহাড় ও লেকের সৌন্দর্য। ঘরের সামনে রয়েছে লাগোয়া বারান্দা যার থেকে প্রায় অর্ধবৃত্তাকার ভাবে বরন্তি দেখা যায় লেকটাকে। এতটা জার্নি করে আসার ক্লান্তি এক নিমেষে উধাও হয়ে গেলো রিসর্টের অবস্থান আর সৌন্দর্য দেখে।
রিসর্টের care taker বীরবল। সারাক্ষণ মুখে হাসি লেগে আছে তার। শুধু ও নয় হেটেলের সব কর্মচারীর ব্যবহার খুব ভালো। যখন যা বলেছি হাসি মুখে তা করে দিয়েছে। বীরবলকে খাবারের কথা বলে আমরা যে যার ঘরে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে। স্নান সেরে সোজা চলে এলাম ডাইনিং হলে। গরম ভাত, ডাল, ভাজা, তরকারি, চাটনি, পাঁপড় সহযোগে মধ্যাহ্ন ভোজন জমে গেলো। একদম বাড়ির রান্নার মত হাল্কা আর সুস্বাদু। পেটে ভাত পরতেই শরীর যেন ভিতর থেকে বলে উঠলো এবার একটু বিশ্রাম চাই। অগত্যা চললাম একটু গড়িয়ে নিতে।
দুপুরবেলা দুঘন্টা ঘুমিয়ে নিতেই শরীর একদম তরতাজা হয়ে গেলো। আমি আর সন্দীপদা সোজা উঠে পড়লাম রিসর্টের ছাদে। ছাদ থেকে পুরো বরন্তির রূপ লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। বেশ কিছু ছবি তুলে নিচে নেবে এলাম। সবাই তখন বেড়োনোর জন্য তৈরি। এগিয়ে চললাম বরন্তি পাশের পার ধরে। সূর্য তখন অস্তাচলের পথে। সারা বরন্তি জুড়ে শুরু হয়েছে দিনশেষের হোলি খেলা। ক্ষণে ক্ষণে বদলে যাচ্ছে আকাশের রঙ। তার সাথে বদলে যাচ্ছে লেকের জলের রঙ আর তাতে বরন্তি পাহাড়ের প্রতিচ্ছবি। জানি অসম্ভব, তাও যতটা সম্ভব লেন্সে বন্দী করতে করতে এগিয়ে চললাম। একসময় পাহাড় আর জলের সঙ্গে রঙের খেলা করতে করতে আজকের মত সূয্যিমামা বিদায় নিলেন। আর সাথে সাথে সায়ন্তনের ম্লান আলোয় আরও মোহময়ী হয়ে উঠলো বরন্তি। আমরাও আস্তে আস্তে ফেরার পথ ধরলাম। কারণ লেকের ধারে আলো থাকলেও সেগুলো কোনো কারণে জ্বলছিলো না। তবে বোধহয় না জ্বলে ভালোই হয়েছে। প্রকৃতির কোলে এই কৃত্রিম আলো বড়ই বেমানান লাগতো। আর রাস্তায় হোঁচট খাওয়া ছাড়া অন্য কোন ভয় এখানে নেই। এখানকার মানুষজন দরিদ্র হতে পারে কিন্তু অসৎ নয়। তার প্রমাণ পেয়েছি বারবার।
রিসর্টে ফিরতেই বাটিতে করে মুড়ি আর veg পকোড়া দিয়ে গেলো। আমরা বীরবলকে বলে রেখেছিলাম তাই আলাদা করে আমাদের চিকেন পকোড়া ভেজে দিয়ে ছিলো আলাদা মূল্যের বিনিময়। গল্পগুজব আর বরন্তির নিস্তব্ধতাকে উপভোগ করতে করতে কোথা দিয়ে যে সময় পার হয়ে গেলো তা টেরই পেলাম না। অবশেষে রাত্তিরে রুটি মাংস দিয়ে ডিনার করে আরো কিছুক্ষণ আড্ডা মেরে শুয়ে পড়লাম। ঘরের মধ্যে জোনাকীর আলোর জ্বলা নেভা দেখতে দেখতে একসময় ঘুমিয়েও পড়লাম।
পরদিন খুব ভোরবেলা ঘুম ভেঙে গেলো। বেড়িয়ে পড়লাম প্রাতঃভ্রমণে। আজ আর বরন্তি লেকের দিকে না গিয়ে লেকের উল্টো দিকের রাস্তা ধরে ঢুকে পড়লাম বরন্তি গ্রামে। পাহাড়ের কোলে এক ছোট্ট আদিবাসী গ্রাম বরন্তি। সবে ঘুম ভাঙছে গ্রামের। বাড়ির মহিলারা শুরু করছেন ঘরকন্নার কাজ। চাষী ভাই লাঙ্গল কাঁধে বলদ জোড়া নিয়ে চলেছেন মাঠে। হাঁস, মুরগী, গরু, ছাগল ঘুরে বেড়াচ্ছে গ্রামের ইতি উতি। ভিতরে একটি গুমটি দোকান দেখলাম সবে ঝাঁপ খুলছে। সেখানে গিয়ে চায়ের খোঁজ করতে উনি আপ্যায়ণ করে বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেলেন। খাতির করে খাটিয়ায় বসতে দিলেন। বাড়ির মহিলারা চা করে এনে আমাদের পরম যত্ন সহকারে পরিবেশন করলেন। পাঁচ টাকার চায়ের বিনিময় এতো অতিথেয়তা এর আগে কখনো জোটে নি।
পরদিন খুব ভোরবেলা ঘুম ভেঙে গেলো। বেড়িয়ে পড়লাম প্রাতঃভ্রমণে। আজ আর বরন্তি লেকের দিকে না গিয়ে লেকের উল্টো দিকের রাস্তা ধরে ঢুকে পড়লাম বরন্তি গ্রামে। পাহাড়ের কোলে এক ছোট্ট আদিবাসী গ্রাম বরন্তি। সবে ঘুম ভাঙছে গ্রামের। বাড়ির মহিলারা শুরু করছেন ঘরকন্নার কাজ। চাষী ভাই লাঙ্গল কাঁধে বলদ জোড়া নিয়ে চলেছেন মাঠে। হাঁস, মুরগী, গরু, ছাগল ঘুরে বেড়াচ্ছে গ্রামের ইতি উতি। ভিতরে একটি গুমটি দোকান দেখলাম সবে ঝাঁপ খুলছে। সেখানে গিয়ে চায়ের খোঁজ করতে উনি আপ্যায়ণ করে বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেলেন। খাতির করে খাটিয়ায় বসতে দিলেন। বাড়ির মহিলারা চা করে এনে আমাদের পরম যত্ন সহকারে পরিবেশন করলেন। পাঁচ টাকার চায়ের বিনিময় এতো অতিথেয়তা এর আগে কখনো জোটে নি।
চা খেয়ে আবার রিসর্টে ফিরলাম। আজ আমাদের পরবর্তী গন্তব্য জয়চন্ডী পাহাড়। আগের দিনের অটোটাকেই বলে রেখেছিলাম। তবে পরে বুঝেছিলাম এটা আমরা একটু ভুল করেছিলাম। কারণ এতে আমাদের সময়ও লেগেছিলো অনেক বেশি তার সাথে গরম ও খারাপ রাস্তায় এতটা জার্নি করা বেশ কষ্টকর। তাই গাড়ি নেওয়াটাই ভালো।
জয়চন্ডীসহ অন্যান্য জায়গার গল্প আর এখানে নয় অপেক্ষা করতে হবে পরের post -এর জন্য।
জয়চন্ডীসহ অন্যান্য জায়গার গল্প আর এখানে নয় অপেক্ষা করতে হবে পরের post -এর জন্য।
Comments
Post a Comment