বর্ষায় বরন্তি (পর্ব-২)
বর্ষায় বরন্তি (পর্ব-২) - জয়চন্ডী পাহাড়, গড়পঞ্চকোট, পাঞ্চেত, মাইথন
বর্ষায় বরন্তি (পর্ব-১) পর্বের পর
প্রথম দিনটা বরন্তির এদিক ওদিক ঘুরে কাটিয়ে দিয়ে আজ আমাদের গন্তব্য জয়চন্ডী পাহাড়। জয়চন্ডী পাহাড়ের খ্যাতি সত্যজিৎ রায়ের গুপীগাইন বাঘাবাইন ও হীরক রাজার দেশে ছবির জন্য। গুপী বাঘা ছবিতে ভূতের রাজার বর পাওয়ার পর যেখানে বসে খেয়ে পুকুরে হাত ধুয়ে ছিলো সেটা এইস্থানে। আজও রয়েছে সেই পুকুর। আর হীরক রাজার দেশে ছবিতে উদয়ন পন্ডিত হীরক রাজার সৈন্যদের হাত থেকে পালিয়ে এই পাহাড়েই আত্মগোপন করে ছিলেন। পাহাড়ের মাথায় রয়েছে মা জয়চন্ডী দেবী ও বজরংবলীর মন্দির। ৫১১ মতভেদে ৪৮০ খানা সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হয় পাহাড়ের মাথায়।
সকাল সাড়ে নটা নাগাদ আমরা লুচি, আলুচচ্চড়ি আর মিষ্টি দিয়ে জলখাবার সম্পন্ন করে বেড়িয়ে পড়লাম জয়চন্ডী পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। প্রথম দিকে রাস্তা অত্যন্ত খারাপ। তবে মেন রোডে ওঠার পর মসৃণ রাস্তায় পরে অটো দৌড়তে থাকলো বেশ জোরে। কখনো দিগন্ত বিস্তৃত চাষের ক্ষেত, কখনো ছোটো গ্রাম বা শহর আবার কখনোবা পঞ্চকোটের ঘনজঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ছুটতে ছুটতে একসময় এসে পৌঁছলাম জয়চন্ডী পাহাড়ের পাদদেশে।
সকাল সাড়ে নটা নাগাদ আমরা লুচি, আলুচচ্চড়ি আর মিষ্টি দিয়ে জলখাবার সম্পন্ন করে বেড়িয়ে পড়লাম জয়চন্ডী পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। প্রথম দিকে রাস্তা অত্যন্ত খারাপ। তবে মেন রোডে ওঠার পর মসৃণ রাস্তায় পরে অটো দৌড়তে থাকলো বেশ জোরে। কখনো দিগন্ত বিস্তৃত চাষের ক্ষেত, কখনো ছোটো গ্রাম বা শহর আবার কখনোবা পঞ্চকোটের ঘনজঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ছুটতে ছুটতে একসময় এসে পৌঁছলাম জয়চন্ডী পাহাড়ের পাদদেশে।
পাহাড়ের নীচে বেশ খানিকটা সমতল জায়গা রয়েছে। সেখানে অস্থায়ী ছাউনি করে রয়েছে কিছু দোকান আর যাত্রীদের বসার জায়গা। সেখানে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে আমরা আস্তে আস্তে উঠতে শুরু করলাম পাহাড়ের চূড়ার অভিমুখে। কিন্তু ৩৭ ডিগ্রী তাপমাত্রা আর প্রখর রোদ্দুরে কিছুক্ষণের মধ্যেই সকলে হাঁপিয়ে উঠলাম। কিছুটা উঠেই নিতে হচ্ছে বিশ্রাম। গাছের ছায়ায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে চোখেমুখে জল দিয়ে আবার আস্তে আস্তে উঠতে থাকি। ব্যাতিক্রম শুধু বাচ্চাগুলো। ওদের উৎসাহের কোনো খামতি নেই। যত উপরে উঠি চড়াই তত বাড়তে থাকে। উঠতে উঠতে একসময় ঠিক চূড়ায় ওঠার আগে দেখলাম একটা ধ্বংসপ্রাপ্ত নজরমিনার দাঁড়িয়ে আছে পথের পাশে। সেখানে কিছু ছবি তুলে অবশেষে একসময় এসে পৌঁছলাম পাহাড়ের মাথায়।
পাহাড়ের মাথায় পৌঁছে বেশ কিছুক্ষণ চন্ডী মায়ের মন্দিরের দাওয়ায় বসে বিশ্রাম নিলাম। একটু চাঙ্গা হতে এদিক ওদিক ঘুরে দেখতে থাকলাম মন্দির চত্বরটাকে। পাহাড়ে উঠে প্রথমেই পরে চন্ডী মায়ের মন্দির। তার পাশে একটু নীচে বজরংবলী মন্দির। মায়ের মন্দিরের সামনে রয়েছে একটি গাছ। বহু মানুষ সেখানে নিজেদের মনস্কামনা পূরণের আশায় ঢিল বেঁধে রেখে গেছেন। নীচ থেকেই দেখেছিলাম জয়চন্ডী পাহাড়ের দুপাশে আরো দুটো পাহাড় আছে। সেই পাহাড় দুটোর চুড়ো এখান থেকে মনে হচ্ছে হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে। আর সবথেকে সুন্দর, পাহাড়ের উপর থেকে অনেক নিচে ফেলে আসা জনপদ, গ্রাম, জঙ্গলের দৃশ্য।
চড়া রোদ মাথায় নিয়ে বেশিক্ষণ আর পাহাড়ের মাথায় থাকা গেলো না। আস্তে আস্তে নামতে শুরু করলাম। তবে নামতে বেশি কষ্ট হলো না। প্রচন্ড গরম আর এতটা ওঠা নামার কারণে সবাই বেশ ক্লান্ত ও তৃষ্ণার্ত। লেবুর শরবত ও ঠান্ডা লস্যি দিয়ে গলা ভিজিয়ে আবার কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে ফেরার পথ ধরলাম। রিসর্টে ফিরে আবার আরেক প্রস্থ স্নান করে খেয়েদেয়ে একটু বিশ্রাম। কারণ পাহাড়ে ওঠার ধকলে সবাই বেশ ক্লান্ত।
ঘুম ভাঙ্গলো প্রবল মেঘ গর্জনে। বাইরে বেরিয়ে এসে দেখি আকাশ জুড়ে কালো মেঘের ঘনঘটা। মাঝে মাঝেই ঝল্সে উঠছে বিদ্যুতের ঝলকানি। কিছুক্ষণের মধ্যেই নামলো মুসল ধারায় বৃষ্টি। দুচোখ ভরে দেখতে থাকলাম বরন্তির সেই বৃষ্টিস্নাত রূপ। বৃষ্টির জন্য বিকেলে আর বেরোনো গেলো না। রিসর্টের বারান্দায় বসে বসেই চললো বৃষ্টি উপভোগ আর জমিয়ে আড্ডা।
আজ আমাদের বরন্তিতে শেষ রাত্রি। তাই বৃষ্টি থামতে, রাত ৮টা নাগাদ রিসর্ট থেকে বেরিয়ে পরলাম একটু হাঁটবো বলে। নিকষ কালো অন্ধকারে মোরা চারিদিক। নিজেদের পায়ে চলার আওয়াজ, ঝিঁঝিঁ, ব্যাঙের ডাক আর কোথাও থেকে ভেসে আসা মাদলের গুরুগম্ভীর শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। বড় মোহময় সেই পরিবেশ। মাদলের শব্দ লক্ষ্য করে কিছুটা এগোতে দেখলাম পাশের এক রিসর্টে সাঁওতালি নাচের ব্যাবস্থা করা হয়েছে, সেখান থেকেই আসছে মাদলের আওয়াজ।
কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে আবার এগিয়ে চললাম জলাধারের পার দিয়ে। রাতের নিজস্ব একটা আলো থাকে সেটা বোধহয় এই অন্ধকারে না এলে বুঝতাম না। সেই আলোতে সারা বরন্তি উপত্যকাটা হয়ে উঠেছে আরো মায়াবী। নিস্তব্ধতা, সদ্য থামা বৃষ্টির সোঁদা গন্ধ নিয়ে বেশ খানিকটা হেঁটে ফিরে এলাম আমাদের রিসর্টে। মনে রয়ে গেল এক ভালোলাগার আবেশ। কাল আবার সকাল সকাল বেরোনো। যেতে হবে অনেকগুলো জায়গায়।
আজ বরন্তিকে আমাদের বিদায় জানানোর দিন। গড়পঞ্চকোট, পাঞ্চেত, মাইথন হয়ে কুমারডুবি থেকে ধরবো ফেরার ট্রেন। সেইমত আগেরদিন রাত্রি বেলাতেই বীরবলকে বলে গাড়ির ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছিল। সকাল সকাল check out করে জলখাবার খেয়ে যখন গাড়িতে উঠে বসলাম ঘড়িতে তখন নটা।
কালকের জয়চন্ডী পাহাড়ের রাস্তাতেই বেশ খানিকটা যাওয়ার পর মেন রোডে এক জায়গায় ডানদিকে মোড় নিয়ে আমরা ঢুকে পড়লাম পঞ্চকোটের জঙ্গলে। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ চলার পর এসে পৌঁছলাম গড়পঞ্চকোট চত্বরে। ইতিহাস আর প্রকৃতি এখানে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। 'গড়' মানে দুর্গ, 'পঞ্চ' মানে পাঁচ আর 'কোট' কথাটি এসে স্থানীয় 'খুন্ত' শব্দ থেকে, যার মানে বংশ। কথিত আছে রাজা জগৎ দেও মধ্যপ্রদেশ থেকে পুরীতে তীর্থ করতে যাচ্ছিলেন এই পথে। এইখানে তাঁর রানী এক পুত্র সন্তান প্রসব করেন। কিন্তু সকলে মনে করেন রানী মৃত সন্তান প্রসব করেছেন। তাই বাচ্ছাটিকে এখানে ফেলে রেখেই রাজা পুরীর পথে এগিয়ে যান। সাত আদিবাসী রাজা মিলে এই শিশুটিকে মানুষ করেন ও তার নাম রাখেন দামোদর শেখর। এই দামোদর শেখরই পরবর্তী কালে পঞ্চকোট রাজবংশের স্থাপন করেন এবং এই গড়পঞ্চকোটে তার রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। ১৭৫০ সালে মারাঠা বর্গী আক্রমণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এই দুর্গ।
আমরা সেই ধ্বংস স্তুপের সমানে দাঁড়িয়ে আছি এখন। যদিও কালের নিয়মে আর যত্নের অভাবে সেই ইতিহাসও আজ নিশ্চিহ্ন হবার পথে। সারা চত্বর জুড়ে ছড়িয়ে আছে তোরণদ্বার, রানীমহল, নজরমিনার, কল্যাণেশ্বরী সহ বিভিন্ন মন্দিরের প্রায় বিলীন হয়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ। দীর্ঘ্য অবহেলা, অযত্নের ফলে এই সবকে গ্রাস করে নিয়েছে বড় বড় গাছ, শ্যাওলা। এক একটির তো কাছেই পৌঁছানো যায় না। শুধুমাত্র রাসমন্দিরটিকেই সারানো হয়েছে। তবে পুরোনো টেরাকোটার কাজ সম্পূর্ণভাবে উদ্ধার না করা গেলেও যেটুকু বেঁচে আছে তাতেই মন ভরে যায়। শুনলাম আস্তে আস্তে বাকি স্থাপত্যগুলোকেও সরানো হবে। প্রার্থনা করি সেটা যেন খুব তাড়াতড়ি শুরু হয়। না হলে বাংলার এই পুরানো ইতিহাস খুব তাড়াতাড়ি বিলীন হয়ে যাবে। এবার আসা যাক প্রকৃতির কথায়। মাথায় কালো মেঘ আর background এ বিশালাকার কালচে সবুজ রঙের পঞ্চকোট পাহাড় নিয়ে সদ্য সংস্কার হওয়া রাস মন্দিরের রূপ যেন চোখে লেগে থাকে। সারা জায়গাটা গভীর অরণ্যে ঘেরা। শহুরে ধোঁয়া ধুলো দেখে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া চোখটা যেন সবুজের পরশে আবার নতুন করে জীবন পেলো।
আমাদের গাড়ি যেখানে রাখা ছিলো ঠিক তার উল্টো দিকে একটা ছোট দোকানে বিক্রি হচ্ছিলো পুরুলিয়ার ছৌ নাচের আদলে তৈরি কাগজের মূর্তি। সবাই দরদাম করে বেশ কিছু মূর্তি সংগ্ৰহ করে আবার গাড়িতে উঠে বসলাম। এবার যাবো পাঞ্চেত জলাধারে। ঘন জঙ্গল আর পাহাড়ী পথ দিয়ে ছুটে চললো আমাদের গাড়ি। কখনো গরুর পালের পাশ দিয়ে, কখনো মনোরম পাহাড়ি পথের দৃশ্য দেখতে দেখতে এক সময় পৌঁছে গেলাম পাঞ্চেত ড্যাম।
দামোদর নদের উপর চারিদিক পাহাড়ে ঘেরা বিশালাকার এই ড্যাম। এর এক পাশে পশ্চিমবঙ্গ অন্যপাশে ঝাড়খন্ড। আমরা ঢুকলাম পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে যাবো ঝাড়খন্ডের দিকে। ড্যামের পাশ দিয়ে নেবে গেছে একটা সরু সিঁড়ি যেটা দিয়ে একবারে নিচে জলের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়। আমরাও গুটি গুটি পায়ে নেবে পড়লাম নীচে। ড্যামের মধ্যে ঘোরার জন্য আছে নৌকা সফরের ব্যবস্থাও। তবে আমরা করলাম না। আকাশ মেঘলা থাকায় জলের ধারে বসে থাকতে বেশ ভালোই লাগছিল। প্রায় আধঘন্টা কাটিয়ে, ছবি তুলে আবার উঠে পড়লাম আমাদের গাড়িতে। এবারে যাবো মাইথন।
মাইথন জলাধারটি আবার ঝাড়খন্ড রাজ্যে। পাঞ্চেত ছাড়িয়ে কিছুদূর যেতেই শেষ হয়ে গেলো জঙ্গল, শেষ হয়ে গেলো গ্রাম আমরা আবার ঢুকে পড়লাম তিনদিন আগে ফেলে আসা ধুলো-ধোঁয়া পূর্ণ ঘিঞ্জি শহুরে ব্যাস্ততার মধ্যে। পাঞ্চেত থেকে মাইথনের দূরত্ব বেশ অনেকটাই। লোকের ভিড় গাড়ি ঘোড়া ঠেলে মাইথন পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় ১টা বেজে গেলো। আমাদের ড্রাইভার সাহেব বললেন আগে কল্যাণেশ্বরী ঘুরে এসে তারপর মাইথন আসবে। তাই মাইথন ড্যামকে পিছনে ফেলে আমরা এগিয়ে চললাম মা কল্যাণেশ্বরী মন্দিরের উদ্দেশ্যে। গড়পঞ্চকোটের মন্দির থেকে মাকে স্থানান্তরিত করে এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
অন্যান্য হিন্দু মন্দিরের মতই এই মন্দিরের প্রবেশপথের দুইপাশে সারি দিয়ে রয়েছে পুজোর জিনিস আর প্যাঁড়ার দোকান। একটা ছোট্ট নিচু গেট পেরিয়ে প্রবেশ করলাম মন্দিরে। মন্দির চত্বরটা বেশ বড়। গেটের পরেই একটা উন্মুক্ত বাঁধানো জায়গা। সেখানে রয়েছে বলিকাঠ। জায়গাটার চারপাশে বসার জন্য চওড়া রক। একপাশে দেখলাম দু-তিনটে বিয়েও হচ্ছে। এই চাতালের পাশে আরেকটি গেট পেরিয়ে মূল মন্দির। আমরা যখন পৌঁছলাম তখন মায়ের আরতি হচ্ছে। বেশ কিছক্ষণ দাঁড়িয়ে মায়ের আরতি দেখে আমরা এগিয়ে গেলাম মন্দিরের ডান পাশের দিকে। এইখানে আমার জন্য একটা চমক অপেক্ষা করছিলো। মন্দিরের একদম গা দিয়ে পাহাড়ের গা বেয়ে ধাপে ধাপে নেমে গেছে বারাকর নদী আর তার অপর পাশে রয়েছে জঙ্গল। ছোট্ট একটা ঝর্ণার রূপ নিয়েছে নদী। ইন্টারনেট ঘেঁটে অন্যান্য info জোগাড় করলেও এই info টা আমার কাছে ছিল না। তাই হঠাৎ পাওয়া এই দৃশ্যটা যেন আরও সুন্দর হয়ে মনে রয়ে গেলো।
কল্যাণেশ্বরী মন্দির - মাইথন
কল্যাণেশ্বরী মন্দির - মাইথন
কল্যাণেশ্বরী মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা বরাকর নদী
ফেরার পথে কিছুটা প্যাঁড়া নিয়ে নিলাম। তারপর মধ্যাহ্নভোজনের জন্য সোজা মাইথন ইয়ুথ হোস্টেলে। এখানকার খাবার দাবারের মান বেশ ভালো। দামও ঠিকঠাক। আমরা ডিম থালি নিলাম। খাওয়া শেষ করে আবার গাড়িতে করে চলে এলাম মাইথনে। পাঞ্চেতের থেকেও বিরাটাকার এই মাইথন ড্যাম। ইতি উতি জেগে রয়েছে ছোটো ছোটো সবুজ গাছে ভরা দ্বীপ। হাতে টানা ছোটো ছোটো শিকারার মত নৌকায় করে ঘুরে আসা যায় দ্বীপগুলিতে। দূরে দিগন্তরেখায় লেগে রয়েছে পাহাড়ের সারি। আকাশে মেঘ থাকায় সারা ড্যামের জলে চলছে আলো ছায়ার খেলা। আমাদের দলের অনেকেই এবার শুরু করলো নৌকায় চড়ার বায়না। এদিকে হাতে সময় কম। বিকাল পাঁচটায় ট্রেন।
অবশেষে সব সমস্যার সমাধান হলো। মাইথনে নৌকার সাথে সাথে স্পীডবোটে ঘোরার ব্যবস্থাও আছে। যেটা দশমিনিটের মধ্যে মাইথন লেকে একটা বড় পাক দিয়ে লক গেট দেখিয়ে নিয়ে আসবে। অতএব টিকিট কেটে আমরা জেটিতে অপেক্ষা করতে থাকলাম আমাদের আট সীটের বোটের জন্য। মিনিট পনেরো অপেক্ষা করতেই চলে এলো আমাদের বোট। আমরা লাইফ জ্যাকেট পরে চরে পরলাম বোটে। আমাদের নিয়ে দুরন্ত গতিতে ছুটলো বোট। এর আগে নৌকা, লঞ্চে এমনকি মুম্বাইতে আরব সাগরেও লঞ্চে চড়েছি। কিন্তু স্পীডবোটে চড়ার অভিজ্ঞতা একবারে নতুন। জলের উপর দিয়ে এই ভাবে ছুটে চলা সত্যি বেশ রোমাঞ্চকর। কিন্তু মাইথনের আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আমার মনে হয় হাতে টানা নৌকাই ভালো।
স্পীডবোট থেকে নেমে আরও বেশ কিছুক্ষণ মাইথনের পারে বসে কাটালাম। হঠাৎ করে কালো মেঘ করে এলো। পুরো প্রকৃতির রূপটাই কেমন বদলে গেলো। জোরে হাওয়া দিতে থাকলো কালো মেঘের ছায়ায় মাইথনের রূপ হয়ে উঠলো আরো মোহময়ী। শুরু হলো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। আমরাও আস্তে আস্তে হাঁটা দিলাম আমাদের গাড়ির দিকে। সময় যে শেষ... আবার ফিরতে হবে দৈনন্দিন জীবনের বাধা রুটিনে। আর অপেক্ষা করতে হবে পরের বারের জন্য।
Comments
Post a Comment